Header Ads

Story of robot sophia [রোবট সুফিহা এর সত্য ঘঠনা]

আমাদের দেশে যেকোন বিষয়ে দুইটা বড় দল ও বিশ পঁচিশটা উপদলে ভাগ হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। সোফিয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। একদল আবেগের বন্যায় ভেসে গিয়ে ম্যারি মি রব তুলছে, আর একদল সরকারকে কষে গাল দিচ্ছে ফালতু একটা রোবট আনতে ১২ কোটি টাকা নষ্ট করার জন্য।
প্রথমতঃ রোবটটা আনার ব্যপারে সরকার জনগনের ট্যাক্সের টাকা নষ্ট করেনি, টাকা দিয়েছে ইসলামী ব্যাঙ্ক। ইসলামী ব্যাঙ্কের জনকল্যাণমূলক অনেক প্রকল্প অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে সরকার পরিচালনা পর্ষদে হাত দেয়ার পর থেকে অবান্তর কাজে আগবাড়িয়ে টাকা ঢালা শুরু হয়েছে। অনেকটা সৌদি যুবরাজের আগবাড়িয়ে সোফিয়াকে নাগরিকত্ব দেবার মতই দৃষ্টিকটু। সো, সরকারকে গালাগালি করা বুদ্ধিমানের কাজ না এখানে।
দ্বিতীয়তঃ অন্য রোবটের সাথে এটার তুলনা। জাপানের কোম্পানি হোন্ডার তৈরী আসিমো প্রায় ৪০ বছর ধরে গবেষণার ফল এবং হিউমনেয়ড রোবটের পারফেক্ট উদাহরণ। সোফিয়া আসিমোর তুলনায় কিছুই না, হাটতে পারে না, সিঁড়ী ভাংতে পারেনা, খালি পারে কথা বলতে আর মুখের ভাব ফোটাতে। আরেকটা তুলনা আসছে সাস্ট এর রিবো এর সাথে। রিবোও কথা বলতে পারে, সোফিয়াও কথা বলতে পারে।
আসল ব্যপার হচ্ছে, আসিমো, রিবো আর সোফিয়া তিনটাই তিনটি ভিন্ন ধরণের রোবট। আসিমো হিউমনয়েড, মানে হচ্ছে সে মানুষের কর্মকান্ড নকল করতে পারবে। দুই পায়ে হাঁটা, দৌড়ানো, সিঁড়ি ভাঙ্গা ইত্যাদি। রিবোকেও হিউমেনয়েড ক্যাটাগরিতে ফেলা যেতে পারে, সাথে আছে কিছু কথা বলার ক্ষমতা। আর সোফিয়া হচ্ছে এনড্রয়েড প্রকৃতির। এনড্রয়েড হচ্ছে মানুষের মুখের অভিব্যাক্তি নকল করার ক্ষমতা।
হ্যানসন রোবটিক্সের গবেষণার মূল ধরণই হচ্ছে এনড্রয়েড। আগেও তারা আইনস্টাইনের মত দেখতে রোবট বানিয়েছিল। সোফিয়ার সাথে আইনস্টাইনের পার্থক্য হচ্ছে এটার অভিব্যাক্তি প্রকাশের ক্ষমতা অনেক বেশি। আর সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে এটার আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স যেটা ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেস করে জবাব দিতে পারে। রিবোও পারে সেটা, তবে খুবই সীমিত পরিসরে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে কথোপকথন চালানো এখন আর কোন ব্যপারই না। যে ফোন দিয়ে এই পোস্ট পরছেন (ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ হলে পকেটের ফোনটি হাতে নিয়ে দেখুন) সেটা আইফোন হলে সিরি নামের এক মহিলা বসে আছে ওখানে, মাইক্রোসফট হলে করটানা নামের মহিলা বসা, আর অন্য এনড্রয়েড ফোন হলে গুগল নাও বসে আছে। এরা সবাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে, তাঁকে যেটা বলা হচ্ছে সেটা বুঝার চেষ্টা করে আর সেইমত জবাব দেবার চেষ্টা করে। এগুলো ফোনে ঢুকানো গেলে রোবটে ঢুকানো যাবেনা এমন কোন কথা নাই।
ফাইনাল থটঃ সোফিয়া বাংলাদেশে ১২ কোটি টাকা (যার পকেট থেকেই যাক) নষ্ট করে আনা যুক্তিযুক্ত হয়েছে কিনা?
উদ্দেশ্য যদি দেশে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত রিসার্চকে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে তবে অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। যারা এসব বিষয়ে দেশে বসে রিসার্চ করছে তারা হাতেনাতে দেখতে পারছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার। নতুন অনেক রিসার্চারও আগ্রহী হবে এই ট্র্যাকে আসতে। কনফারেন্সে হ্যানসন সাহেব এটা কীভাবে কাজ করে তার বিস্তারিত বিবরন দিয়েছেন কিনা, বা কয়জন রিসার্চার সেটা এটেন্ড করেছেন আমি জানিনা, হলে ভাল।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিকৃয়া তাই বলছে। সবাই তার সন্তান ধারণের ইচ্ছা, জামদানীতে ডিজাইন করা পোশাক আর প্রধানমন্ত্রীর নাতির নাম বলতে পারার ক্ষমতা নিয়ে কথা বলছে। পত্রিকায় মেশিন লার্নিং পদ্ধতিতে কথা বলে এটুকু উল্যেখ করে দায় সেরেছে।
উদ্দ্যেশ্য যদি প্রচার হয়ে থাকে তবে ১০০% সফল ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭ আর ইসলামী ব্যাঙ্ক। এই ফাঁকে কনফারেন্সের নামটা অনেকে জেনে গেল। সাস্টের রিবোও কিছু প্রচারণা পেল। যদিও বর্তমান রোবোটিক্সের সময়ে এটা কিছুই না, তবুও আমাদের তরুণেরা এটা তৈরী করেছে। ভবিষ্যতে সোফিয়ার চেয়েও ভাল রোবট আমাদের তরুণেরা বানাবে। তবে যারা বলছে সোফিয়ার চেয়ে রিবোই ভাল ছিল তারা মাত্রাতিরিক্ত দেশেপ্রেমে ভুগছে, এটার ফলাফল ভাল না। সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা দোষের কিছু না।
বড় পোস্ট, কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

No comments

Subscribe For More News

Powered by Blogger.